বাংলাদেশের উত্তর-মধ্যাঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাচীন জেলা হলো ময়মনসিংহ। এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ও শিক্ষাবিষয়ক অবদান দেশের ইতিহাসে এক বিশেষ স্থান দখল করে রেখেছে। অনেকেই জানতে চান, ময়মনসিংহ কিসের জন্য বিখ্যাত—এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে ইতিহাস, সাহিত্য, কৃষি, শিক্ষা ও পর্যটন সব দিক থেকেই এর গুরুত্ব স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
ময়মনসিংহ সবচেয়ে বেশি পরিচিত এর সাহিত্যের জন্য। বাংলা সাহিত্যের কিংবদন্তি কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও সাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেনের মতো গুণীজনেরা এই জেলার সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। বিশেষভাবে, ময়মনসিংহ গীতিকা—যা বাংলার লোকসাহিত্যের অমূল্য ধন—এলাকার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে বিশ্ব দরবারে পরিচিত করেছে।
শিক্ষাক্ষেত্রেও ময়মনসিংহ অনন্য। এখানে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় দেশের অন্যতম প্রধান উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কৃষি বিজ্ঞান ও গবেষণায় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান আন্তর্জাতিক পর্যায়েও প্রশংসিত। এছাড়াও, আনন্দমোহন কলেজ, বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়সহ অনেক ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এ জেলাকে শিক্ষা-নগরীতে পরিণত করেছে।
ময়মনসিংহের আরেকটি পরিচিত দিক হলো এর নদী ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। ব্রহ্মপুত্র নদকে ঘিরে গড়ে ওঠা এই জেলার ভূপ্রকৃতি মনোমুগ্ধকর। শাহজাহান পার্ক, ভাওয়াল জাদুঘর ও গারো পাহাড় অঞ্চল ময়মনসিংহকে পর্যটন মানচিত্রেও স্থান করে দিয়েছে।
এছাড়াও, এখানকার হস্তশিল্প, ময়মনসিংহ শিল্পকলা একাডেমি, ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি, লোকসঙ্গীত এবং বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি ময়মনসিংহকে বিশেষভাবে পরিচিত করে তুলেছে।
সব মিলিয়ে বলা যায়, ময়মনসিংহ ইতিহাস, শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির এক অসাধারণ মিশ্রণে গঠিত একটি জেলা। তার নিজস্ব ঐতিহ্য ও বৈশিষ্ট্যের জন্যই এটি বাংলাদেশের মানচিত্রে আলাদা পরিচয়ে উজ্জ্বল।